সরকার মাজহারুল ইসলাম ,(গাজীপুর জেলা) প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় হামলাকারীরা বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার হুমকিও দেন। বুধবার বিকেলে উপজেলার কালামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বনবিভাগের জমি জবর-দখলকারীর হামলায় বন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহতের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী।
এঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকাবাসী, বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর এলাকায় উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দলিল লেখক আশরাফ উদ্দিন একটি মার্কেট নির্মাণ করছেন। স্থানীয় চন্দ্রা বিট অফিসের আওতায় ওই এলাকায় তিনি প্রায় ২০ শতাংশ বনবিভাগের জমি জবর-দখল করে এ মার্কেট নির্মাণ করছেন। বুধবারও সেখানে অবৈধভাবে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বনবিভাগ। কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিমের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ওই রেঞ্চ ও চন্দ্রা বিট অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসময় ওই নেতা আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে আকাশ, মনসুরসহ কয়েকজন বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম, স্টাফ তোফাজ্জল হোসেন, জহির উদ্দিন, জামাল হোসেন ও শাহ জালাল আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে শাহ জালাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। অপরদিকে সেখানে স্থাপনা উঠাতে না পারলে ওই বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার হুমকিও দেয় হামলাকারীরা। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ওই অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছেন বনবিভাগ। অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দলিল লেখক আশরাফ উদ্দিন জানান, এখানে যতটুকু কাজ করেছি সেটুকু শ্রমিক দিয়ে খুলে ফেলেছি। এছাড়াও এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে দু-পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেছে। তবে বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলা বা মারধর করা হয়নি, একটু তর্কবিকর্ত হয়েছে।
কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, বনবিভাগের প্রায় ২০ শতাংশ বনের জমি জবর-দখল করে দীর্ঘদিন ধরে আশরাফুল নামে এক ব্যক্তি মার্কেট নির্মাণ করছেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। কয়েকবার নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আবারও স্থাপনা নির্মাণ করছে খবর পেয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযানে যাই। এ সময় তার নেতৃত্বে আকাশ, মনসুরসহ কয়েকজন আমাদের উপর হামলা চালায় ও মারধর করে। তাদের হামলায় আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও আমাদের হত্যার হুমকিও দেন দখলদার আশরাফ। এঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে । এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপর হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এসময় ওই স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উভয়পক্ষকে কাগজপত্রসহ ডাকা হয়েছে। তবে জমিটা বনবিভাগের হলে গাছ লাগানো হবে এবং ব্যক্তি মালিকানা হলে তিনি স্থাপনা করবেন।