মোঃ রনি (ধনবাড়ী) টাঙ্গাইল
স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে শুরু হয় কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। তাঁর নির্দেশনায় ১৯৭৩ সালে দ্রুততম সময়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো নামমাত্র মূল্যে ভর্তুকি দিয়ে ৪০ হাজার শক্তিচালিত লো-লিফট পাম্প, দুই হাজার ৯০০ গভীর নলকূপ এবং তিন হাজার অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। আধুনিক কৃষিযন্ত্র সম্প্রসারণে এটি ছিল ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তারি ধারাবাহিগতায় সারা দেশের নেয়
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায়
ফসল আবাদে বাড়ছে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষির দৃশ্যপট। সনাতন কৃষি পরিণত হচ্ছে এক আধুনিক কৃষিতে। এখন জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা মাড়াই ঝাড়া শুকানো সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি প্রবেশ করেছে যান্ত্রিক যুগে। এতে শুধু ফসল উৎপাদনের ব্যয়ই কমছে না, কমছে ফসল ঘরে তোলার সময়ও। সময়মতো ফসল সংগ্রহ করার ফলে হ্রাস পাচ্ছে সংগ্রহোত্তর ক্ষতি। সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের সময়ও। হ্রাস পাচ্ছে কৃষকের কায়িক শ্রম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে ফসল। সংগ্রহত্তোর অপচয় হ্রাস পাওয়ায় বেশি ফসল পাচ্ছে কৃষক। সর্বোপরি, উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকের লাভের পরিমাণ বাড়ছে। এতে প্রতি বছর শুধু বোরো ও আমন মৌসুমেই কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে প্রায়ই কোটি টাকা।
এক সময় দেশে চাষাবাদ হতো গরু ও মহিষ দিয়ে। এতে জমি প্রস্তুত থেকে রোপণ পর্যন্ত লাগতো দীর্ঘ সময়। আবার শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়েও বিপাকে পড়তে হতো। সময়ের ব্যবধানে গত কয়েক বছরে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় কৃষকদের সেই কষ্ট লাঘব হতে চলেছে। এখন আর শ্রমিকদের অপেক্ষায় দিন গুণতে হয় না কৃষকদের। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়েই কয়েক বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাচ্ছে।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘণ্টায় ২.৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা যায়।এতে কৃষকের শ্রমিক, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানা যায়। আবার স্বল্প শ্রমিকেই মাইলের পর মাইল হয়ে যাচ্ছে ধান কাটা ও মাড়াই। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ঘণ্টায় চার বিঘা জমির ধান কাটা যাচ্ছে।
ধনবাড়ী উপজেলার
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাসুদুর রহমান বলেন, একসময় ভারী কৃষিযন্ত্র বলতে শুধু ট্রাক্টরকেই চিনত দেশের কৃষক। সেটাও খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। কিন্তু এখন কৃষিতে ডজনখানেক বড় যন্ত্রের ব্যবহার করছেন কৃষকরা। চাষাবাদ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত সবখানেই যন্ত্র তাদের সাহায্য করছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের এক গবেষণা বলছে, চাষ, সেচ, নিড়ানি, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০-৯৫ শতাংশ যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। যদিও ফসল রোপণ, সার দেওয়া, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানোর ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এখনো অনেক কম। তবে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করায় গত তিন বছর ধরে এসব ক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারও দ্রুত বাড়ছে।
আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ছোঁয়ায় দেশের কৃষির অবস্থা ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির ও খরচ কমিয়ে আনতে এখন বড় ভূমিকা রাখছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র। এগুলোর মধ্যে আছে ফসল কাটা ও শস্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর, মাটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গভীরভাবে কর্ষণ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে পাওয়ার টিলার। এটি মাটিকে প্রায় ১২ ইঞ্চি গভীর থেকে আলগা করে। মাটিকে বীজ বপনের উপযোগী করে প্রস্তুত করার কাজে রয়েছে প্লান্টার। মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করতে ও বসতবাড়ির কাজে লাগাতে ব্যবহৃত হচ্ছে টু হুইল ট্রাক্টর। বীজ বপন, সার দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট স্থানে বীজ বপন করতে রয়েছে সিড ড্রিল। এ যন্ত্রটি ব্রডকাস্ট সিডার অপেক্ষা আধুনিক। এ ছাড়া রয়েছে মেনুয়র স্প্রেডার, স্প্রেয়ার, বিন হার্ভেস্টার, চেজার বিন, কর্ন হার্ভেস্টার ইত্যাদি।