সারোয়ার হোসাইন, নালিতাবাড়ী, শেরপুর (প্রতিনিধি)
আল্লাহ মেঘ দে পানি দে/ ছায়া দেরে তুই আল্লাহ, আব্বাস উদ্দীনের গানের সুর ধরে গান গেয়ে সেঁজুতি বিদ্যানিকেতনের শিশু শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবক বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছেন।
সোমবার ২৯ (এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের সেঁজুতি বিদ্যানিকেতন অঙ্গনে ফসলের মাঠে বৃষ্টির বন্দনা করেন। এর পর শিশু শিক্ষার্থীরা পানি ছিটিয়ে দলবেঁধে নেচে নেচে গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির জনপ্রিয় গান ধরেন।
পানি ভর্তি বালতির চারপাশে হাঁটু গেঁড়ে সারাশরীরে কাদা মেখে মাটি চাপড়ে আর দু’হাত আকাশপানে তুলে তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছেন শিশু শিক্ষার্থীরা।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজের প্রভাষক স্বপ্না চক্রবর্তী বলেন,তাপদাহে জনজীবন শেষ, অনেকদিন বৃষ্টি হয় না। পূর্বপুরুষদের রীতি অনুযায়ী বৃষ্টির জন্য এই প্রার্থনা করা হয়।
নবরূপী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি জয়জিৎ দত্ত শ্যামল বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি বৃষ্টির জন্য কাদা মাখিয়ে আল্লার কাছে বৃষ্টি চাওয়ার লোকজ সংস্কৃতি। এই লোকজ সংস্কৃতির উৎসব পালন করতে দেখা যায় না। ধন্যবাদ সেঁজুতি বিদ্যানিকেতনের প্রিন্সিপাল এবং সহকর্মীদের তারা বাঙালির প্রায় হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছেন।
শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, কৃষিপ্রধান বাংলায় এই দাবদাহ আর অনাবৃষ্টিতে ফসলের মাঠ হয়ে ওঠে বিবর্ণ। সব জলাশয় শুকিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি আর তাপপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির জন্য নানা আচার পালন করত। এমনও দেখা গেছে, এসব আচার-অনুষ্ঠান পালন হতে। কিন্তু কালপরিক্রমায় তা আজ বিলুপ্তির পথে। লোকজ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এই উৎসব আরো ঘটা করে হোক।
নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বকুল বলেন, বৃষ্টির দেখা না পেলে বাংলার বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ বৃষ্টির জন্য আদি সংস্কৃতি ও লোকজ সংস্কৃতি অনুযায়ী নানা নিয়মাচার ও লোকাচার পালন করত। কালের পরিক্রমায় বৃষ্টির জন্য বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সেই সমৃদ্ধ অধ্যায়টি আজ এক প্রকার বিলুপ্তই বলা চলে। কিছু কিছু আচার এখনো পালিত হয়।