এস কে সুমন ||
বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়েছে মাহে রমজান। পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে কুষ্টিয়ার ইফতার বাজার। বেলা যত গড়িয়েছে ততই জমজমাট হয়ে উঠেছে ইফতার বাজার। তাই পাল্টে গেছে চিরচেনা এ কুষ্টিয়া শহরের চিত্রও।
মঙ্গলবার (১২মার্চ) শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচলিত ইফতারির পাশাপাশি নানান স্বাদের বাহারি আয়োজন সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাহারি এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে এসেছেন। বাহারী ধরনের ইফতারি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা।
সোমবার রাতে প্রথম তারাবি ও সেহেরির পর মঙ্গলবার বিকেলের মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইফতার। আর দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই কাঠফাটা রোদ উপেক্ষা করে মানুষ এখন ভিড় করছেন ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে। রমজানের প্রথমদিনের তাই ধুম পড়ে গেছে ইফতার কেনাকাটার।
শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার গলি পথেও ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী নিয়ে বসে গেছেন মৌসুমি দোকানিরা।
শহরের এনএস রোড, বড়বাজার, থানা মোড়, ছয় রাস্তা মোড়, চৌড়হাস মোড়, জেলখানা মোড়, পেয়ারাতলা, মজমপুর গেট, দবির মোল্লার রেলগেট, মঙ্গলবাড়ীয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই দোকানগুলোতে রকমারি ইফতার তৈরি হয়েছে এ বছরও।
জনপ্রিয় ইফতার সামগ্রীগুলো এবারও শুরুতেই মন কাড়ছে কুষ্টিয়ার মানুষের। তবে ফলমূলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের। প্রথমদিন ইফতারে স্বাদের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য আনতে সাধ ও সাধ্যমত সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।
এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁর সমানে বাহারি ইফতারের পসরা সাজানো হয়েছে। সামনে পণ্যের তালিকা সম্বলিত ব্যানারও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রোজাদারদের আকর্ষণ করার জন্য হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ডেকোরেশন করা হয়েছে। ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ রকমারি ইফতার দিয়ে সাজিয়েছেন ইফতারের প্যাকেজ।
শহরের ব্যস্ততম এলাকা পেয়ারাতলায় গিয়ে দেখা যায়, সদ্য চালু হওয়া আঞ্জুম'স কিচেন এ ইফতার সামগ্রী কেনাবেচায় ব্যস্ত।
শহরের রুপনগর এলাকা থেকে এসেছেন এখানে ইফতারী কিনতে এসেছেন হাসান। পরিবারের জন্য প্রথম রোজার ইফতারে বাহারি আইটেমের সংযোজন করতেই তিনি এসেছেন এখানে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রথম রোজা থেকে মৌবনে যেতাম। এখন যেহেতু এলাকায় চলে এসেছে আঞ্জুম'স কিচেন। এখানে বাহারী ধরনের ইফতার সামগ্রি পাওয়া যায়। খাসির লেগপিস নিলাম এখান থেকে। যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
সঙ্গীত শিল্পী কোহিনূর খানম বলেন, হাউজিং থেকে পেয়ারাতলা এলাকায় আঞ্জুম'স কিচেন এ ইফতারি করতে এলাম।
এখনকার নান্দনিক পরিবেশ সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাছাড়া এখানে ইফতার করেও অনেক তৃপ্তি পেয়েছি। আঞ্জুম'স স্পেশাল শরবত সহ বেশ কিছু আইটেম কিনেছি। এই ইফতারির স্বাদ আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সুযোগ থাকলে প্রতিদিন আসতাম।
ইফতার কিনতে আসা কাটাইখানা মোড় এলাকার ক্রেতা মাহিম বলেন, আজকে রহমতের প্রথমদিন। আর এদিনে পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করবেন। যার জন্য এখানে আসলাম। দামেও বেশ সাশ্রয়ী থাকায় সুবিধা হলো।
শহরতলীর মোল্লাতেঘরিয়া এলাকার কিরন মাহমুদ বাজারে ইফতার সামগ্রির দাম গতবারের চেয়ে একটু বেশি হয়েছে। ইফতারীতে ভাজাপোড়ার সাথে ফলমূল না হলে চলে না। অবশ্য সেই ফলমূলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে এখানে এসে তিন টাকা পিস আলুর চপ, বেগুনী ও পেঁয়াজু কিনেছি। বর্তমান দ্রব্যমুল্যের বাজারে এত অল্প দামে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আঞ্জুম'স কিচেন এর ম্যানেজার অনিক আহমেদ বলেন, সব রকমের ইফতারের আইটেমই তুলে এনেছি আমরা। যাতে সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারা যায়। পাশাপাশি মাটন লেগ রোস্ট এবং আস্ত মুরগীর রোস্ট জনপ্রিয়। এছাড়া ছোলা, পিয়াজু, বেগুনিসহ অন্যান্য নিয়মিত ইফতার আইটেম তো রয়েছেই।
আঞ্জুম'স কিচেন এর সিওও সাফিনা আঞ্জুম জনী বলেন, অন্য দেশে যখন রমজান এলে অনেক পণ্যের দাম কমে যায় এছাড়াও অফার দেওয়া হয়। সে তুলনায় আমাদের দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাধ্যের মধ্যে স্বল্প দামে বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ করতে আমরা আঞ্জুম'স কিচেনের যাত্রা শুরু। যার বত্যয় ঘটেনি এই ইফতার বাজারে। রোজাদারদের কথা মাথায় রেখে আমরা পেয়াজু, আলুর চপ, বেগুন চপ তিন টাকা পিস হিসেবে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি অন্যান্য আইটেমও স্বল্প দামে বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, আমরা কর্পোরোট হাউসগুলোতেও ইফতারীর অর্ডার নিয়ে থাকি। তাছাড়া এখানে সেহেরীর ব্যবস্থাও থাকছে।
শহরের মজমপুর গেট এলাকায় ইফতার নিয়ে বসেছেন মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, আজকের প্রথম দিনের ইফতারি বিক্রি মোটামুটি ব্যবসা ভালো হচ্ছে। এই যে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ইফতারি কিনতে। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে কুলাতে পারছি না। সন্ধ্যার আগ মহূর্তে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
শিশির বেকারীর পরিচালক তানভীর শিশির বলেন, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ও জিলাপিসহ বিভিন্ন ইফতার পণ্যের দাম এবার গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য রমজান শুরু হওয়ার আগে যা ছিল রমজানের প্রথম দিনেই সেই সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন ক্রেতারা।