খান আশিকুজ্জামান
মোংলা (বাগেরহাট)
অবশেষে মোংলাবাসীর বহুল প্রতিক্ষীত খুলনা-মোংলা যাত্রীবাহি রেল সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৭৩ বছর পর রেল যোগাযোগে যুক্ত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। প্রথম অবস্থায় নতুন এই রুটে আগে থেকে চলাচলরত খুলনা-বেনাপোল রুটের বেতনা কমিউটার লোকাল ট্রেনটিকে মোংলা কমিউটার নামকরন করে মোংলা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচলের মধ্যে দিয়ে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের সূচনা করা হয়। তবে সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ রেলপথে প্রথম অবস্থায় ট্রেন চলবে মাত্র একটি। শনিবার সকাল ১০ টায় বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে ‘মোংলা কমিঊটার’ নামক এ ট্রেনটি দুপুর ২ টা ১০ মিনিটের দিকে মোংলা পৌঁছালে উৎফুল্ল মোংলাবাসী ট্রেনটিকে স্বাগত জানায়। এ সময় মোংলার স্থানীয় সাংসদ হাবিবুন নাহার ফিতা কেটে ট্রেন সার্ভিসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে ৩ টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি মোংলা থেকে বেনাপোলের উদ্দ্যশ্যে ছেড়ে যায়। এদিকে পুরনো বেতনা এক্সপ্রেসের পুরাতন বগি এবং ইঞ্জিন দিয়েই শুরু হয়েছে মোংলা-বেনাপোল ট্রেন চলাচল। অনেক যাত্রীরা বলছেন, এ ট্রেন না চালিয়ে অবমুক্ত ভ্যাকুয়াম রেক দিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হোক। এ দিকে খুলনা-মোংলা পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখন মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে মালামাল নিতে পারবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন বিকাশে আরো সহায়ক হবে এ রুট। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত সময়ে ও কম খরচে মালামাল নিতে পারবেন। গতিশীল হবে মোংলার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্প ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর একনেকে পাস হয়। এরপর আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রূপসা ব্রিজের ওপর রেলসেতুসহ প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে ভারতীয় দুটি এবং বাংলাদেশের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লার্সন অ্যান্ড টুরবো লিমিটেড (এলএনটি) রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু তৈরির কাজ করেছে। বাকি কাজ করেছে ভারতের অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের মুন ব্রাদার্স জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশনের কাজটি করেছে। বেশ কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। শেষ দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছিল চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজে সময় লেগেছে সাড়ে ছয় বছর। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ এক হাজার কোটি টাকা। পক্ষান্তরে ভারত সরকারের পক্ষে দেশটির এক্সিম ব্যাংকের বিনিয়োগ দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ তিন হাজার কোটি টাকা।
নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে দেশের রেলওয়ের বর্তমান নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন এবং মোংলা বন্দরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা, রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালকুদার বলেন, আপাতত ‘বেতনা কমিউটার’ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে মোংলা কমিউটার ট্রেন হয়ে বেনাপোল-মোংলা রুটে চলাচল করবে। পরবর্তীতে আরেকটি রেক দিয়ে এই রুটে ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। #