এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ
দীর্ঘ প্রতিক্ষিত কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর’২৩ ইং। ট্যানেল উদ্বোধনের দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সুশৃংখল, নিরাপদ ও সর্বসাধারনের জন্য উপভোগ্য করে তোলতে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দফতর ও সকল বিভাগের দায়িত্বশীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
১২ সেপ্টেম্বর’২৩ ইং মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোঃ মনজুর হোসেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, বাংলাদেশ পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর(পিডি) মোঃ হারুনর রশীদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মাহতাব উদ্দিন আহামদ, সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সচিক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, দফতর ও প্রজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ঠ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে সেতু সচিব মোঃ মনজুরুল হক সভায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিদের সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপুর্ন আলোচনার বিশ্লেষনী ব্যাখ্যা দেন, টানেল উদ্বোধনের দিন দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষা করে বরাবরের মত আলাদা আসনের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘টানেল দিয়ে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক চলাচল করতে পারবে না। কোন গাড়ি চলাচল করবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন গাড়ি থেকে কত টাকা টোল নেওয়া হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেলে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করবে ৮০ কিলোমিটার বেগে। নিরাপত্তায় দুই পাশে থাকবে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। সভাশেষে সাংবাদিকদের সচিব বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পরের দিন থেকে স্বপ্নের টানেল দিয়ে চট্টগ্রাম সহ সারাদেশের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে বলে জানান।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম টানেল নিয়ে কোন মহল বা যে কেউ কোন ধরনের মিথ্যাচার বা প্রপাগান্ডামুলক নেতিবাচক খবর রটালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দেন।
সভায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানেলে জরুরি মুহুর্তে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ি টোল ফ্রি চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, “টানেল সার্বিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখানে যেসব যানবাহন চলাচল করবে সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর থাকবে”।
উল্লেখ্যঃ প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় এবং আনুষঙ্গিক কাজগুলো এখন প্রায় শেষ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে এবং মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে। মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২.৪৫ কিলোমিটার। মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে একটি ৭২৭ মিটার ফ্লাইওভার নির্মান করা হয়েছে। এই টানেলটি হয়ে উঠবে ‘দুই শহরের এক নগরী’ এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হওয়া প্যাসেজওয়ে