হাফিজুর রহমান(যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের কেশবপুরে আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন উপজেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানর মুনজুর রহমানের সমর্থক ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইউনিয়নের কলাগাছি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মুনজুর চেয়ারম্যানের লোকজন কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২০ জন কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারাত্মক আহত ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বিএনপি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমান গত ৫ আগস্টের পর থেকে জনরোষ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গা ঢাকা দেওয়ায় ঠিকমতো ইউনিয়ন পরিষদে আসতে পারতেন না। তিনি গত ১৭ নভেম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে আসা একেবারে বন্ধ করে দেন। চেয়ারম্যান পদটি রক্ষা করতে তিনি গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে তার সমর্থকদের নিয়ে ইউনিয়নের কলাগাছি বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ করতে করতে ইউনিয়ন পরিষদের এসে তালা ভেঙে ভেতরে প্র্রবেশ করেন। এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সুফলাকাটি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রাসেল হাসান গাজীর ওপর হামলা করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে তার বন্ধুর প্রাইভেট কারটি ভাঙচুর করে। এরই জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চেয়ারম্যান মুনজুর রহমানের নেতৃত্বে অর্ধশত আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মিদের ঙপর হামলা চালিয়ে ১৪ জনকে কমবেশী আহত করে। এদের মধ্যে সুফলাকাটি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী মোড়ল, থানা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ গাজী, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম, অহেদুজ্জামান, রিয়াজুর রহমান মারাত্মক আহত হন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে পাল্টা হামলা করলে চেয়ারম্যান মুনজুরের পক্ষের সারুটিয়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল, নূর ইসলাম মোল্লা, জালাল দফাদার, রোজিনা বেগম, কায়েমখোলা গ্রামের আব্দুল মান্নান ও বেতিখোলা গ্রামের আব্দুল হামিদ শেখ মারাত্মক আহত হন । সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমবেশি ২০ জন আহত হয়েছেন। মারাত্মক আহতদের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে গেছেন।
সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইবাদত হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান মুনজুর রহমান ঠিকমতো ইউনিয়ন পরিষদে আসতেন না। গত ১৪ নভেম্বর ঘের সংক্রান্ত বিষয়ে ইউনিয়নের কলাগাছি বাজারে মারামারি হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি ইউনিয়ন পরিষদে তালা মেরে দিলে ১৭ নভেম্বর থকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে আসতেন না। গত বুধবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ বন্ধ করে কলাগাছি বাজারে বসেছিলাম। এ সময় তিনি লোকজন নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। ওই সময় তার সমর্থকদের মধ্যে কিছু লোক আমাকে মারপিট করার জন্য কলাগাছি বাজারে খুঁজতে থাকে।
সুফলাকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিএম মহিউদ্দিন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মুনজুর রহমানের নেতৃত্বে সত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ১৪ জন নেতা-কর্মীদেরকে আহত করে। এ সময় হামলাকারীরা তার কলাগাছি বাজারের ব্যক্তিগত অফিস ও বেশ কয়েকটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করেছে। শেষ মুহুর্তে টিকে থাকতে না পেরে চেয়ারম্যান মুনজুরের লোকজন ৫/৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে তিনি জানান।
উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুনজুর রহমানের ফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, সুফলাকাটি ইউনিয়নের কলাগাছি বাজারে সংঘর্ষে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখান থেকে কিছু কাঁচের বোতলের টুকরা উদ্ধার হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।