রহিদুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
রাজশাহীতে এক সার ডিসারের কাছে কৃষক কিনেছেন ১ বস্তা ডিএপি সার। তবে ঐ কৃষকের ভাউচারে বিক্রি দেখানো হয়েছে ৪০ বস্তা সার। সারের ডিলারেরা শুধু এমন অনিয়মেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা কোনো কোনো সময়ে বিভিন্ন প্রকারের সারে অতিরিক্ত দাম হাকিয়ে বাজার ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। ক্যাশ মেমোতে কোন সারের বস্তার কত দাম তা উল্লেখ করেন না সার ডিলাররা কত বস্তা সার তা মৌখিক বা ক্যালকুলেটরে হিসাব করে মোট টাকা ক্যাশ মেমোর নিচে লেখে কৃষকের হাতে দেয়া হয়।
এদিকে এমনি প্রমাণ মিলেছে এক কৃষকের ভাউচারে বা ক্যাশ মেমোতে। কৃষক এক বস্তা সার কিনলেও রয়েছে তার ক্যাশ মেমোতে এমওপি (পটাশ) ২০ বস্তা, টিএসপি (ফসপেট) ৮ বস্তা করে। কিন্তু বিক্রেতার সঙ্গে সার ক্রেতার দেওয়ার তথ্যের গরমিল পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে এমন গরমিল ধরা পড়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া বাজারের একটি কীটনাশক বিক্রেতার ক্যাশ মেমোতে। এমন পৃথক দুই ঘটনায় দুজন সার ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– মেসার্স নাহার এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স জারমান আলী ট্রেডার্স। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ক্যাশ মেমোর সূত্রে কথা হয় ক্রেতা (কৃষক) পবা উপজেলার বাগধানির এনামূল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মনে পড়ছে না। কত বস্তা সার কিনেছি। তবে আমি এত সার কিনিনি। সর্বশেষ এক বস্তা টিএসপি সার কিনেছি।’
কিন্তু এই ভাউচারে টিএসপি সার বিক্রির জায়গায় রয়েছে ৮ বস্তা। বিষয়টি নিয়ে মেসার্স জারমান আলী ট্রেডার্সের বিক্রেতা রজব আলী (বাবু) বলেন, তিনি ভাউচার অনুযায়ী সার বিক্রি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছ, কৃষকদের ন্যায্য মূল্যে সার ক্রয়ের সুবিধার্থে বাজারে নজর রাখতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তার অংশ হিসেবে পবা উপজেলার বায়া বাজার এলাকায় দুই সারের ডিলারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যায় ক্রেতা সেজে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন ডিলারদের দোকানে যান। এসময় তিনি মোবাইলে সার ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সার বিক্রেতা ও ক্রেতার দেওয়া দামের তথ্যে গরমিল পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের জরিমানা করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তন্ময় কুমার সরকার, উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম বলেন, মেসার্স জারমান আলী ট্রেডার্স বিএনডিসির সার ডিলার। দোকানগুলোতে গিয়ে তাদের ক্যাশ মেমোতে থাকা নম্বরগুলোতে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ক্রেতা বলছেন ১ বস্তা ডিএপি সার কিনেছেন। কিন্তু বিক্রেতা বলছেন ৪০ বস্তা সার কিনেছেন ক্রেতা। এসময় দাম ও সার বিক্রির তথ্যে গরমিল পাওয়া দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন জানান, কৃষকদের ন্যায্য মূল্যে সার ক্রয়ের সুবিধার্থে বাজারে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রির তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ধারাবাহিকতায় মজুতের বেশি সার সংরক্ষণ ও ভাউচারের (ক্যাশ মেমো) প্রদত্ত তথ্যের সঙ্গে ক্রেতার বক্তব্যের মিল না থাকায় বায়া বাজার এলাকার দুই সারের ডিলারকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।