মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চৌড়হাঁস শেখপাড়া, মতি মিয়ার রেলগেট, কালী মন্দিরের সামনে রেললাইনের পাশে মিতাউল ওরফে (মিতানুর) কবিরাজের বাড়ি। তিনি শনিবার ও মঙ্গলবার জ্বীন হাজির করেন এবং রোগীদের জ্বীনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেন। মিতানুর কবিরাজ নিজের শরীরের উপর জ্বীন হাজির করার অভিনয় করে রোগীদের বিশ্বাস অর্জন করার কৌশল অবলম্বন করেন। তাইতো দলে দলে মহিলারা হাজির হন ভন্ড কবিরাজের বাড়িতে। মতি মিয়ার রেল গেটের আশেপাশের লোকজন তাকে মিতানুর কবিরাজ হিসাবেই চেনেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এক ‘ফু’ দিয়ে পানি ও তেল পড়ে দেন যার মাধ্যমে জটিল ও কঠিন রোগসহ নানা রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন আমি বাচ্চাদের চিকিৎসা করতে নেই জনপ্রতি ২১০ টাকা এবং স্বামী-স্ত্রীর চিকিৎসা করতে নেই ৪৫০ টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় কবিরাজ মিতানুর রোগী বুঝে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর নিচতলায় বেশ কিছু সংখ্যক মহিলা রোগী যারা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তার বাড়ির সামনে ও ভিতরে মানুষের ভিড়। সবাই কবিরাজের সামনে দাঁড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে কবিরাজ মিতানুর সাদা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি পড়ে, বউ মানুষের মত মাথায় ঘম্টা দিয়ে আসনে বসে আছেন। আর তার পাশে বসে আছেন তার স্ত্রী। সামনে রোগীরা দাঁড়িয়ে আছেন, ফু দিচ্ছেন কবিরাজ। রোগীরা টাকা দিচ্ছেন এবং মিতানুর কবিরাজের স্ত্রী তা গ্রহণ করছেন। এরপর কবিরাজের স্ত্রী টাকাগুলো ভাঁজ করে বান্ডিল করছেন। এভাবেই চলছে ভণ্ড কবিরাজ মিতানুরের চিকিৎসা। নারী-পুরুষকে সামনে নিয়ে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে প্রায় কয়েক বছর থেকে সর্বরোগের চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে কবিরাজের বিরুদ্ধে। তার বাড়িতে শনিবার ও মঙ্গলবার গড়ে ২০০-৩০০ লোকের সমাগম হয়। কবিরাজ নিজেই জানান ১৯৯৮ সাল হতে তিনি আল্লাহর আশির্বাদে বাড়িতে বসে এমন চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। ‘ফু’ দিয়ে তিনি ছোট বাচ্চাদের জিদ করা, খাবার গ্রহণ না করা, উপর দৃষ্টি, যেকোনো সমস্যা, যেকোনো মানুষকে বশীকরণ, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিল বন্ধন তৈরি করা, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ফাটল তৈরি করা, পরকীয়া আসক্ত মুক্ত করা, প্রেমে সফল হওয়া, পরীক্ষাতে ভালো ফল করানো, যৌন রোগ, নিঃসন্তানে সন্তান দান ও স্বামী স্ত্রীর কঠিন রোগসহ জটিল ও কঠিন রোগ ভালো করছেন। তিনি চিকিৎসা বাবদ অতিরিক্ত টাকা নেন না বলে দাবি করেন। স্থানীয়রা জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় দালাল সেট করেছেন। তাদের মাধ্যমে সর্বরোগের চিকিৎসার কথা প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজেরাই তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলেও প্রচার করছেন। এসব কথা শুনে বিশেষ করে কুষ্টিয়া জেলা সহ অনেক জেলা ও উপজেলার সহজ- সরল মানুষগুলো ছুটে আসেন মিতানুর কবিরাজের কাছে। তার রোগীদের বেশিরভাগই নারী। সুযোগ বুঝে তিনি টাকা হাতিয়ে নেন। কবিরাজ মিতানুর বলেন, আল্লাহর দয়ায় আজ আমি জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। সবাই আমার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কবিরাজের কাছে চিকিৎসা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তার উত্তরে তিনি বলেন আমার কোন চিকিৎসা সনদ নেই আমি আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দিয় এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায় । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আসলে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।