মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল হক চৌধুরী ওস্তাদ ভাই এর ৩৭ তম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক চৌধুরী রতন এর ১৫ তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে হাজী মোঃ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার সময় কেন্দ্রীয় দপ্তর, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী, পূর্ব মজমপুর, কুষ্টিয়ায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য মহিলা লাঠিয়াল সদস্য ডা.শাহানা আক্তার চৌধুরী, জুলফিকার আক্তার বানু, শাহিনা সুলতানা দিজু, শারমিন সুলতানা আরজু (কানাডাতে লাঠি খেলা করেন),রূপন্তি চৌধুরী, ক্রমন্ত্রী চৌধুরী, ফাতেমা, শারমিন প্রমুখ।
পুরুষ লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যগণের মধ্যে ওস্তাদ রবজেল সরদার, ওস্তাদ মিজানুর রহমান, ওস্তাদ ইয়ামিন, ওস্তাদ শেরখাঁ, ওস্তাদ নীলচাঁদ,ওস্তাদ রেজাউল, ওস্তাদ ইব্রা, ওস্তাদ টিপু খাঁ, ওস্তাদ আবুল হোসেন, ওস্তাদ রোইচ সরদার, ওস্তাদ সাত্তার সরদার, ওস্তাদ নজির মন্ডল, ওস্তাদ জিয়ারুল, ওস্তাদ শফি সরদার, ওস্তাদ আমজাদ হোসেন,ওস্তাদ মারফত, ওস্তাদ বুলবুল, ওস্তাদ আজিজুল বিশ্বাস, ওস্তাদ সাইফুল ইসলাম, ওস্তাদ হামিদুল, ওস্তাদ জহুরুল, ওস্তাদ আলাউদ্দিন আলাল, ওস্তাদ হাজী খবির উদ্দিন মন্ডল, ওস্তাদ আনোয়ার মোল্লা, ওস্তাদ আওলাদ হোসেন, ওস্তাদ আবুল সরদার, ওস্তাদ মোরশেদ আলী, ওস্তাদ নাহিদ, ওস্তাদ শহিদুল, ওস্তাদ সাগর আলী প্রমুখ। গ্রাম বাংলার এই খেলার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কুষ্টিয়ার প্রয়াত সিরাজুল হক চৌধুরী ।
যিনি ওস্তাদ ভাই নামে পরিচিত। ৩৭ বছর পূর্বে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর তিনি চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। রেখে গেছেন এই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা।গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় নবান্ন উৎসবে, আশুরাসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে প্রদর্শন হয়ে থাকে।
সাধারণত এলাকার সংস্কৃতিমনা মানুষেরা এই আয়োজন করে থাকে। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ঐতিহ্য রক্ষা পেতে পারে। না হলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য লাঠিখেলা। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু বলেন, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী দীর্ঘ ৯০ বছর যাবত এই গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্য রক্ষায় লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতায় পরিচালনা করে আসছে। সরকারের প্রতি আহবান জানাতে চাই এই লোকজ ঐতিহ্য লাঠিখেলা সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে।
লাঠিখেলা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী গোল্ডেন সোর্ড ১৯৩৩ সালে নিখিল বঙ্গ লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ওস্তাদ ভাই এই সংগঠনটিকে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী নামকরণ করেন।
ওস্তাদ সেরখাঁন বলেন তিনি ১২ বছর বয়স থেকে লাঠি খেলা শুরু করেন এবং তার বর্তমান বয়স ৯০ বছর। তিনি ৯০ বছর বয়সেও লাঠি খেলার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই লাঠি খেলার সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন বলে তিনি আমাদেরকে জানান। তিনি ১৯৮২ সালে লাখে এক সিনেমায় লাঠি খেলার শুটিং করেন কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর চরে।
চর দখলের উপর ভিত্তি করে এই শুটিংটি হয়েছিল। তিনি ১৯৯৫ সালে আধিয়ার সিনেমায় রংপুর জেলায় লাঠি খেলার শুটিং করেন।১৯৯৩ সালে তিনি সাফ গেমসে লাঠি খেলা খেলেন।
তারা দুই ভাই শেরখান ও টিপু খান সাব গেমসে ঐতিহাসিক সরকি খেলা খেলেন,
তিনি ১৯৯৯ সালে ভারতবর্ষের কলকাতার ইনডোর স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক লাঠি খেলা খেলেন।
তিনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাঠি খেলা খেলেন, উক্ত খেলায় তিনি নিজে তার পুত্র ও নাতির সাথেও তরবারি খেলা খেলেন।
ওস্তাদ রফজেল সরদার বলেন মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে তিনি লাঠি খেলার সাথে যুক্ত হন বর্তমানে তার বয়স ৮৫ বছর। তিনি এই বয়সেও লাঠি খেলার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। শরীরচর্চার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো লাঠি খেলা। তার বাস্তব প্রমাণ তিনি নিজেই,কারণ ৮৫ বছর বয়সেও তিনি লাঠি খেলা খেলতে পারেন।
আলোচনা সভা শেষে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।