মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু মাজমাদার
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।
সন্তানকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর হলেন মা। যে মায়ের সন্তানরা আজ প্রতিষ্ঠিত সেই মাকেই সমাজ সফল মা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সমাজে সন্তানদের সুশিক্ষিত এবং আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার নিপুণ স্থপতি এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতীক হিসেবে সফল মায়ের নাম ছবেদা খাতুন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের গোপালপুর এলাকার কৃষি কর্মকর্তা এসএম রগ
রহমতুল্লাহর স্ত্রী।
ছবেদা খাতুনের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ ডিসেম্বর। বাড়ির অন্য সকল কন্যাদের মধ্যে টগবগে ও উজ্জীবিত হলেও বেশিদূর পড়ালেখা হয়নি তার।
১৯৬৩ সালে মেধাবী,পরিশ্রমী, উন্নত এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী এসএম রহমতুল্লাহর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এসএম রহমতুল্লাহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করতেন।
সে সময়ের কঠিন সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজাল ভেদ করে ছবেদা খাতুনকে সংসার ধর্মের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়।
বৈবাহিক জীবনের দীর্ঘ চার দশকের পথ চলায় নানা বাধা বিপত্তি আর ঝড় ঝাপ্টা পার করেছেন তিনি তার বিচক্ষন মেধা, অপরিসীম ভালোবাসা আর পাহাড়সম ধৈর্য্য দিয়ে।
সন্তানদের সুশিক্ষা দিয়ে দেশে-বিদেশে আলোকিত ও বিকশিত করে তুলেছেন তিনি। সফল জননী হিসেবে সমাজে সমাদৃত ছবেদা খাতুন। তাঁর সন্তানদের কেউ হয়েছেন চিকিৎসক, ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের কর্মকর্তা, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকতা, কেউ হয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তা আবার কেউ হয়েছেন শিক্ষক।
তাঁর প্রথম কন্যা রওশনারা। তিনি এইচ আর পোলট্রি ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দ্বিতীয় কন্যা ফাতেমা উম্মুল খায়ের ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত, তৃতীয় কন্যা ডাঃ উম্মে আবেদিন সায়েমা সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী এন্ড অবস), হিকমাহ হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, কুষ্টিয়া। প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। চতুর্থ কন্যা উন্মে রুমান ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রিন্সিপ্যাল অফিসার, পঞ্চম কন্যা ফুল হাসিনা একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রথম পুত্র এস এম কামরুজ্জামান (বাবুল) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অফিসার, দ্বিতীয় পুত্র ডাঃ এস এম আক্তারুজ্জামান (মজনু) মাগুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (সার্জারী), তৃতীয় পুত্র ডাঃ এস এম খসরুজ্জামান (মুকুল) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক, এবং চতুর্থ এবং সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র আবুজর হংকং-এ পি এইচ ডি ক্যান্ডিডেট অ্যাট দি হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত।
জীবনযুদ্ধকে জয় করে সফল জননী হিসেবে মনে করে তার সন্তান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এস এম খসরুজ্জামান (মুকুল) বলেন, আমার মায়ের জন্য আমরা গর্বিত। আমার মায়ের সন্তানরা স্ব-স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত আজ। কিন্তু এর পেছনে সবটুকু অবদান মায়ের। জীবনযুদ্ধের কঠিন সময়ে আমার মায়ের দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর কর্মের ফলে আজ আমাদের এই অবস্থান। আজকে মায়ের এই সম্মাননায় আমরা গর্বিত।
ছবেদা খাতুন ছোট বেলা থেকেই ছিলেন ধর্মভীরু এবং বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে এখনো শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রেখে চলেছেন এই মহিয়সী নারী। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি চলত তার বই পুস্তকের সাথে গভীর প্রেম। সামাজিকতা রক্ষার চেষ্টা ছিলো সেসময় থেকেই। এখনো এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, আমার আত্মিয় স্বজনদের অবস্থা ভালো ছিলো। আজ আমি গর্বিত, আমার সন্তানরাও সবাই ভালো অবস্থানে রয়েছে বলেই তাদের সবার সাথে যোগযোগ হয় এবং আমার সন্তানদের সােথ তাদের বেশ সখ্যতা রয়েছে।
সন্তানদের কাছে আপনার কী চাওয়া পাওয়া জানতে চাইলে জানান, আমি চাই সন্তানরা সমাজ ও দেশের কাজে এসে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকুক। নিজের আলোয় সমাজকে আলোকিত করুক। এছাড়া আমার সন্তান ও পুত্রবধূরা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নেন। তারা সবসময় ভাল থাকুক এই কামনা করি।
সফল জননী হিসেবে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, সন্তানদের সব সময় বুঝিয়েছি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। লেখাপড়া হচ্ছে স্থায়ী সম্পদ। লেখাপড়া শিখে নিজে আলোকিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করা যায়।
কুষ্টিয়া জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সফুরা ফেরদৌস বলেন, দৃঢ় মনোবল, অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ আপন আলোয় উদ্ভাসিত। পাশাপাশি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে এই ছবেদা খাতুন। তার জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে আজ তিনি গর্বিত। আমরা তাকে সফল জননীর সম্মাননায় ভূষিত করতে উদ্যোগ নিয়েছি।