কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি,
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কেন্দ্রিয় বাজারে যোগাযোগের ব্যস্ততম প্রধান সড়ক হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল পুরাতন মহাসড়কটি। উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য যান চলাচলের একমাত্র সড়কটি অন্য সব সড়কের মধ্যে অনেকটাই ব্যস্ততম সড়ক। খাড়াজোড়া বাইপাস থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল পুরাতন মহাসড়কটি লতিফপুর উপজেলা পরিষদের প্রানকেন্দ্র হয়ে মাওনা-ফুলবাড়িয়া-ধামরাই রোডের সাথে যুক্ত হয়ে কালিয়াকৈর বাইপাসে গিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাথে মিলেছে।
অসাধু দখলদারদের কারনে পুরাতন এ সড়কটির দুপাশ দিন-দিন দখল হয়ে যাওয়ার কারনে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে সড়কটি। উপজেলার লতিফপুর জোড়া ব্রিজের দুপাশ থেকে কালিয়াকৈর বাজার রোড, মডেল মসজিদের সামনে দিয়ে ফুলবাড়িয়া সড়ক পর্যন্ত বাজার সংলগ্ন এলাকার আশে-পাশের রাস্তার দুপাশে প্রতিনিয়ত সরকারী(সওজের) জমি দখলের রমরমা বানিজ্য চলছে। ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ, দোকানপাট, টং দোকান ঘর, বহুতল ভবন, মাছের খামার, শো-রুম, খাবার হোটেলের নামে সওজের জমি দখল করে নিচ্ছে অসাধু দখলদারগন। এছাড়াও মসজিদ ও মাদ্রাসার নাম করেও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে এসকল অবৈধ দখলদাররা। সওজের জমি দখলের পিঁছনে সড়ক ও জনপথের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও এক শ্রেণীর প্রভাবশালী অসাধু চক্র, বিভিন্ন দলের নামধারী নেতারও জরিত রয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এসব নেতা, প্রভাবশালী অবৈধ দখলদাররা সড়ক ও জনপথের লোকজনের সাথে আঁতাত করেই দখল বানিজ্যের রমরমা বানিজ্য করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে দখল বানিজ্যে শীর্ষে রয়েছেন জামাই-শশুর হিসেবে পরিচিত দুই ব্যক্তি। এতে যেমন একদিকে সরকার ভূমির সরেজমিন দখল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে দেখা দিচ্ছে এসব জমি উদ্ধারে উচ্ছেদের জটিলতা। বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়। তবে এবিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে? স্থানীয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথের লোকজনের নজরধারী নেই জবর দখলের বিরুদ্ধে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে দিন দিন দখলের মাত্রা বেড়েই চলেছে ।
সরেজমিনে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কালে জানা যায়, সম্প্রতি জামাই আলম ও তার শশুর সামসুল হক দুজনের মধ্যে চলছে রাস্তার পাশের সরকারী(সওজের) জমি দখলের প্রতিযোগিতা। জামাই আলমের সওজের জমিতে পূর্বেরও রয়েছে রিক্সার গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, মুদি দোকান, চায়ের দোকানসহ প্রায় ২৫টি ঘর। এভাবে সওজের জমিতে ঘর ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে তিনি প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি আবার সরকারী(সওজের) জমিতে নতুন করে দোকান নির্মান করছেন প্রশাসনের নাকের ডগায়। ঘর করতে পারলেই ঘরের সিকিউরিটি বাবদ দোকানদারের কাছ থেকে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবেন আলম। জামাই আলম বর্তমানে একটি নতুন করে পাকা টিনসেড দোকান ঘর নির্মান শুরু করেছেন কালিয়াকৈর ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায়। অপরদিকে সওজের জমি দখল করে ঘর নির্মানে পিছিয়ে নেই শ^শুর সামসুল হক, মেয়ের জামাইয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পুরাতন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসে প্রবেশ পথের পাশে ট্্রাক-স্টেশন এলাকায় সড়ক ও জনপথের জমিতে গড়ে তুলেছে বিশাল সাম্্রাজ্য। সরকারী(সওজের) জমি দখল করে গ্যারেজ, মুদি দোকান, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকা সিকিউরিটির বিনিময়ে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে লাখ টাকার বেশী ওই সব ঘর ভাড়ার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জামাই শ^শুর দুজনে মিলে সওজের প্রায় কয়েক কোটি টাকার জমি জবর দখল করে নিয়েছে। সম্প্রতি সওজের জমিতে মাটি ফেলে জমি ভরাট করে একটি দোকান নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে সামছুল হকের। সড়ক ও জনপথের লোকজন কাজে বাঁধা দিয়ে গেলেও সন্ধ্যা ও রাতের বেলায় আবার কাজ করে যাচ্ছে।
মাহিন গাড়ী কোম্পানির মালিক বুলবুল আহম্মেদ ও তার ম্যানেজার দুলাল কালিয়াকৈর ট্্রাক-স্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে সওজের জমি দখল করে বিভিন্ন গ্যারেজসহ ৬/৭ দোকান ঘর নির্মাণ করছেন বীরদর্পে। সড়ক ও জনপথের সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের বাধা উপেক্ষা করে এসব ঘর নির্মান করছেন। সাধারন মানুষের প্রশ্ন? কোথায় তাদের খুটির জোর নাকি সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এসব দখল বানিজ্যের কাজ চলছে।
এছাড়াও লতিফপুর জোড়া ব্রিজের দুপাশে স্থানীয় লোকজনসহ অনেকেই সওজের জমিতে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স’মিল, ফার্নিচারের দোকান, খুটি তৈরির কারখানা, বসত-বাড়ি, গরুর খামার, মাছের খামার করে দখল বাণিজ্য চালিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সুরুজ গং সড়ক ও জনপথের জমিতে মাছের খামারে নিজেদের জমি দাবী করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথের লোকজন কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে জোড়া-ব্রিজ থেকে ফুলবাড়ীয়া রোড পর্যন্ত দখল বাণিজ্যের মহোৎসব চলছে বলে এলাকাবাসীর দাবী।
স্থানীয় বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ি জালাল আহম্মেদ কয়েক একর সরকারী(সওজের) জমি দখল করে অনায়াসে কোন প্রকার বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই মাছের খামার করে জমি দখলে রেখেছেন দীর্ঘদিন যাবত। এছাড়াও কিছু দিন আগে সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে তিনি।
এছাড়া কালিয়াকৈর বাজার রোডসহ ফুলবাড়ীয় রোডের দুপাশে ও সরকারী জমিতে সাগর, জুয়েল, রতন, মানিক নামের অবৈধ দখলদারসহ আরো অনেকে দোকানপাট, মাছের খামার, শো-রুম, গোডাউনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ মাধ্যমে সওজের প্রায় ১০-২০ একর জমি জবর দখল করে নিয়েছে। দুপাশে রাস্তার জমি জবর দখলের কারনে রাস্তা সুরু হয়ে যাওয়ায় কালিয়াকৈর বাজার মোড়ে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এসকল দখলদারদের হাত থেকে সরকারী(সওজের) জমি উদ্ধারের দাবী স্থানীয়দের।
দখলদার জামাই আলম জানান, এ বিষয়ে কোন নিউজ করা যাবে না। এ নিউজ বন্ধ রাখতে হবে। আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে কোন ঝাঁমেলা করা যাবে না।
শশুর সামসুল হক বলেন, আমি এসব জমি অনেক আগে থেকেই দখলে আছি। আমার এখানে কয়েকটি দোকান আছে। আমি এসব ঘর বাবদ পৌরসভায় ট্যাক্স দিয়ে থাকি। এসব জমি আমার। এসব জমির কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আমি এসব জমি উপর মহল থেকে লিজ নিয়ে এসেছি।
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী অভি আহমেদ সুজন জানান, আমি ওই এলাকায় দোকানপাট তুলার খবর পেয়ে আমাদের লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, কালিয়াকৈর বাজার রোডে রাস্তার দুপাশে সরকারী জমিতে কোন দোকানপাট থাকবে না। এদের জন্য সব সময় যানজট গেলেই থাকে। সব ভেঙ্গে দেওয়া হবে। এছাড়া সরকারী কোন জমি কাউকে দখল করতে দেয়া হবে না।