1. admin@dakbela.com : admin :
একজন ইমামের গল্প - ডাক বেলা
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পবিত্র কাবাঘরে ‌জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যুবক পদুয়ার হারুন কসবায় চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মেধাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত নবীনগরে মোবাইল চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে যুবকের আত্মহত্যা শ্রীপুরে বোতাম তৈরি  কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড! আগুন নিয়ন্ত্রণে ৭টি ইউনিট  রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রী ও শ্যালিকার আরএমপি’র রাজপাড়া থানার নতুন ভবনের উদ্বোধন মিঠাপুকুরে ওয়াল্ডভিষণ CVA কর্ম-পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত। কালিয়াকৈর মডেল প্রেস ক্লাবের বাৎসরিক শিক্ষা সফর কক্সবাজার গোপালপুর দ্বী-মূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ কসবায় বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা কিন্ডারগাটের্ন এসোঃ বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

একজন ইমামের গল্প

ডাক বেলা ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৮২ বার পঠিত

মোঃ আশরাফ ইকবাল পিকলু
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধ

মসজিদ নির্মাণের স্বপ্নদেখা,পরিকল্পনাকরা এবং বাস্তবায়ন করে সেই মসজিদে আজীবন বিনাপয়সায় ইমামতি করার মতো ইমাম এবং মসজিদ এদেশে বিরল না হলেও বেশি নেই। কুষ্টিয়ার ঈদগাহপাড়া জামেমসজিদ এমনই ব্যতিক্রমী মসজিদ। আ.ফ.ম. নাজমুস সালেহীন আফসার উদ্দিন-সফুরা খাতুন দম্পতির আর্থিকসহায়তায় ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। অসহায় মহিলাদের সেলাইপ্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে রিকশা-ভ্যান প্রদান, দুস্থদের কর্মক্ষম করা, ফ্রি-চিকিৎসা, বিবাহযোগ্যদের বিয়েতে সহায়তা, দাফনকাফনে সহায়তাকরাসহ প্রথম থেকেই নানাবিধ সামাজিককর্মকান্ড করা হতো এই মসজিদ থেকে। সুস্থ, স্বাবলম্বী, সুন্নাহঅনুসারী একটি ইনসাফভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। মসজিদকেন্দ্রীক এসকল কর্মকান্ডগুলোকে পরবর্তীতে বেগম সফুরা খাতুন ট্রাস্টের একেকটি স্বতন্ত্র প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়। এই মহান দম্পতিই মসজিদটির ভূমিদাতা, অর্থদাতা এবং পৃষ্ঠপোষক। পরবর্তীতে তাঁদেরই পরিবারবর্গ পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছেন। সেই মসজিদকে আবর্তন করেই কুষ্টিয়াতে এমনকি পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সেবা কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিয়েছিল সংস্থাটি। ১৯৭৪ সালের ২৯ জানুয়ারি মসজিদটির নামে দলিল রেজিস্ট্রি করার সময়ে মহল্লার নামানুসারে ‘কোর্টপাড়া মসজিদ ও ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র’ নামে দলিল করা হয়। দলিল করার পরে নাজমুস সালেহীন সাহেবের মনে হয় একটা ভুল হয়ে গেছে! মহল্লার নাম ‘কোর্টপাড়া’ পরিবর্তনকরে ‘ঈদগাহপাড়া’ রাখার যে পরিকল্পনা তিনি ইতোমধ্যে করেছেন সেক্ষেত্রে মসজিদের নামকরণ বড়ো একটা ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে ১৯ মার্চ দলিল সংশোধন করে মসজিদের নামকরণ করা হয় ‘ঈদগাহপাড়া মসজিদ ও ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র’। জুমার সালাতের ব্যবস্থা হওয়ার পরে ‘জামে’ শব্দযোগে মসজিদটির নাম হয় ‘ঈদগাহপাড়া জামেমসজিদ ও ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্র’—এটাই অফিসিয়াল নাম মসজিদটির। তবে ঈদগাহপাড়া জামেমসজিদ নামেই এটি পরিচিত। এখান থেকেই মহল্লার নাম ‘ঈদগাহপাড়া’ রাখার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইমামতি করে কোনোদিন বেতন গ্রহণ করেননি নাজমুস সালেহীন। মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব যেহেতু বেগম সফুরা খাতুন ট্রাস্ট পালন করে, আর্থিক আনুকূল্যের জন্যে মানুষের কাছে তেমনভাবে হাত পাততে হয়নি। ফলে ‘ইমামতিটা’ চলে যায়নি সভাপতি বা কমিটি নামক সামাজিক ইমামদের হাতে— ইমামতি থেকে যায় ইমামের হাতেই; ইমামের ‘ইমাম’ হতে পারেনি মুক্তাদি। ফলে ভিন্নধারার ইমামতি দেখেছে মানুষ এই মসজিদে। শুক্রবার মাগরিব বাদে এবং ফজর-আসরে কোরআনের দরস দিতেন ইমামসাহেব। অসাধারণ ভক্তিভরে প্রভুরকাছে কেঁদে কেঁদে মোনাজাত করতেন। দূরদুরান্ত থেকে মুসল্লিগণ বিশেষকরে জুমার সালাত আদায় করতে আসতেন তার তেলওয়াত ও খোতবা শুনতে। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হওয়ার সুবাদে বাংলাভাষার ওপরে তাঁর চমৎকার দখল ছিলো; বাচনভঙ্গীও ছিল অসাধারণ। ভিন্ন ধর্ম ও লিঙ্গের প্রতি সংবেদনশীল ও সচেতন এই ইমামের বিরুদ্ধে বেফাঁসউক্তি’র অভিযোগ ছিল না। মাদ্রাসার কামিল পাশ ও ইসলামিকস্টাডিজে স্নাতোকোত্তর ইমাম নাজমুস সালেহীন নিয়মিত পড়াশোনা করতেন, ফলে ইসলামের সমসাময়িক বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিলো উল্লেখযোগ্য। কিসসা নয়, জুমার খুতবায় সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে নির্দেশনামূলক বয়ান করতেন। শিক্ষক হিসেবে সমাজে তাঁর সুখ্যাতি ছিলো। সাধারণমানুষের কল্যাণে নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ড করার কারণে মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধারপাত্র ছিলেন আগে থেকেই। এমন একজন ইমামের ইমামতি মসজিদের চৌহদ্দী পেরিয়ে স্বাভাবিককারণেই চলে যেতে পেরেছে সমাজের অন্দরমহলে। জীনভূতের আছর, পারিবারিক ও সামাজিক কলহসহ নানাকারণে মানুষ শরণাপন্ন হতো তাঁর। নিন্দুক-সমালোচকেরা বার বার বৃত্ত এঁকে তাঁকে বৃত্তাবদ্ধ করতে চাইলেও সেসব মাড়িয়ে অনায়াসেই তিনি চলে গেছেন কাঙ্ক্ষিতগন্তব্যে এবং তাঁর মসজিদটিকে নিয়ে গেছেন সত্যিকারের মডেল মসজিদের চেহারায়।

.
কোনো দলীয় রাজনীতি করেননি কোনোদিন তিনি। কাকে ভোট দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরাও জানতে পারেনি। তারপরেও নানাসময়ে দলীয় রাজনীতির ট্যাগ দিয়ে মার্কাবদ্ধ করে কোপানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাঁকে বহুবার। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি, জামাত নির্বিশেষ সকলের সাথেই মিশেছেন, তাদের প্রোগ্রামে গেছেন। ফলে সকলের সাথেই সুসম্পর্ক যেমন ছিলো, তেমনিভাবে নিরঙ্কুশভাবে দলীয়আনুগত্যের গন্ডিতে আবদ্ধ না-করতে পারায় ক্ষোভও ছিলো তাদের বেসুমার। ইমাম হিসেবে তিনি নিজে স্বাবলম্বী ছিলেন এবং ইমামদের নেতা হিসেবে ইমামদের স্বাবলম্বী করতে সচেষ্ট ছিলেন সারাজীবন। ইমামদেরই নয়, সাধারণমানুষকে স্বাবলম্বী, সুস্থ, সাক্ষর, এবং মুমিন করার জন্যে তিনি গড়ে তুললেন বেগম সফুরা খাতুন ট্রাস্টকে। রাজনীতি না-করেও রাজনীতি করার অভিযোগে তিনি বিস্মিত হতেন! মানুষকে মনোশারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে মুক্ত করতে চাওয়ার চেয়ে বড়ো রাজনীতি আর কী হতে পারে! ২০১৮ সালের আজকের দিনটিতেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক তাঁর ভালোকাজগুলোর অছিলায় তাঁকে ক্ষমা করুন, জান্নাতুল ফিরদাউসে বসবাসের সুযোগ দিন। আমিন।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর