রহিদুল ইসলাম, রাজশাহীঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী না হওয়ার কোন কারণ নেই। আওয়ামী লীগ জয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে, রাজশাহীর উন্নয়নও অব্যাহত থাকবে। এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে ‘সমকালীন রাজনীতি: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। সভায় গত ২১ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত করায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। সভায় বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, তবিবুর রহমান শেখ। সঞ্চালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতি বিজড়িত শহর রাজশাহী। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর সুনাম এনে দিয়েছেন। তিনি জাতির পিতার সঙ্গে বৈঈমানি করেননি। জাতীয় চার নেতাই জাতির পিতার সঙ্গে বেঈমানি করেননি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন লাল-সবুজের পতাকা উড়বে, ততদিন জাতির পিতা ও চার নেতাকে স্মরণ করবে জাতি। যতদিন যাবে, এটি আরো বাড়বে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নির্বাচন মানে একটা উৎসব। মাঝে মাঝে এটির ব্যতয় ঘটেছে। সেনা ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসে এমন এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, তখন বলা হতো দশটা হুন্ডা, বিশটা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। তার মানে দশটা হুন্ডা দিয়ে, প্রতিটি হুন্ডায় দুইজন করে গুন্ডা বসিয়ে দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করলে নির্বাচন হয়ে যাবে। জিয়াউর রহমানের আমলে, এরশাদের আমলে, স্বৈরাশাসকদের আমলে এই জাতীয় নির্বাচন হতে আমরা দেখেছি। তখন নির্বাচনের তৃপ্তি জনগণ পায়নি। আর আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দেয়।
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, এরমধ্যে যখন আমরা শুনছিলাম কোন একটা পরাশক্তি আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট বা বিএনপির প্রতি একটা দুর্বলতা জন্মেছে, বিএনপি তো আললাদে আটখানা হয়ে গেছে, তারা মনে করছে, ‘এতো বড় শক্তি যখন আমাদের সমর্থন দিচ্ছে, আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকায় কে’। তাদেও সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে দিল্লিতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেল, সেটি পত্রিকা, টিভি ও ফেসবুকে আপনারা দেখেছেন। আর যে ইংল্যান্ড পাক-ভারত উপমহাদেশকে ১৯০ বছর শাসন করেছে, সেই ইংল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, তিনি খালি পায়ে হাটু গেড়ে নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসে কথা বলছেন। এটি কী প্রমাণ করলো? আজকে নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের নেতারা এমনভাবে শ্রদ্ধা করছেন, সম্মান করছেন।
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলন হলো। ব্রিকস এর সদস্য হতে বাংলাদেশসহ ১৫ থেকে ২০ দেশ আবেদন করেছে।এবার ছয়টি দেশকে নেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। আগামী আরো কয়েকটি দেশ নেওয়া হবে, সেখানে বাংলাদেশ থাকবে ইনশাল্লাহ। ব্রিকস এ বাংলাদেশ নেই এতে বিএনপির কী যে উল্লাস। নিজের দেশের যদি ভালো না চায়, সেই দলকে মানুষ কেন গ্রহণ করবে?। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা দল বিএনপি।
রাজশাহীতে কর্মসংস্থার সৃষ্টির বিষয়ে রাসিক মেয়র বলেন, আগামী ৫ বছরে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছি। এটি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চাই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে আইসিটি খাতে। এই খাতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়, রাজশাহী ট্যুরিজম শহর হিসেবে পরিচত পাচ্ছে। ট্যুরিজম শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে এক্ষেত্রেও অনেক কর্মসংস্থান হবে। আরেকটি হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ঘটেছে। আমরা আশা করি আমাদের নেত্রী এটিও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির আমলে খুন, নির্যাতন, অত্যাচার, জঙ্গিবাদের উত্থান, গ্রেনেড হামলা সহ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এসবের বিষয়ে কখনো ক্ষমা চায়নি বিএনপি। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে তারা এসব আর করবে না, সেটিও কোনদিন তারা বলেননি। কারণ তারা সত্যিকারের অর্থে এসবের সাথে বিএনপি জড়িত ছিল। বিএনপির দুঃশাসন ভুলে গেলে চলবে না।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, লন্ডন থেকে তাকের জিয়া বার্তা পাঠাবে, আর তার কথামতো বাংলাদেশে বিএনপি সরকার গঠন হবে, এটি কোন রাজনীতি না। মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এরপর লুণ্ঠুন করবে, তাদের সেই সুযোগ কখনো দেওয়া হবে না।
সভার শুরুতে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মাসুদুল হক ডুলু এর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আরিফুল হক কুমার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া হাসান আজাদ হিমেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ কবির সেন্টু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শ্যাম দত্ত, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ইয়াসমিন রেজা ফেন্সি, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ওমর শরীফ রাজিব, শ্রম সম্পাদক আব্দুস সোহেল, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার কামাল, কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ ডলার, সদস্য এ্যাড. মোজাফফর হোসেন, নজরুল ইসলাম তোতা, হাবিবুর রহমান বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আব্দুল মান্নান, আতিকুর রহমান কালু, হাফিজুর রহমান বাবু, আখতারুল আলম, এ্যাড. শামীমা আখতারী, বাদশা শেখ, ইউনুস আলী, মোখলেশুর রহমান কচি, এ্যাড. রাশেদ-উন-নবী আহসান, থানা আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজপাড়া থানার সাধারণ সম্পাদক শেখ আনসারুল হক খিচ্চু, বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ, বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানার সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রতন, মতিহার থানার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন, শাহ্মখদুম থানার সাধারণ সম্পাদক শাহাদত আলী শাহু, নগর কৃষক লীগ সভাপতি রহমতউল্লাহ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সাকির হোসেন বাবু, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মোমিন, নগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম রেজা, সাধারণ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা মিতু, নগর যুব মহিলা লীগ সভাপতি এ্যাড. ইসমত আরা, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন নিলু, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সিরাজুম মুবিন সবুজ প্রমুখ।#