স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহীঃ
ইজারা নেয়া পুকুর লীগের দুপক্ষের বিরোধের জেলে রাজশাহীর বাগমারায় এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতে বাগমারা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকসহ তিনজনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়।
নাম প্রকাশ না করে ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা কৃষক লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের সাথে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আসাদুল দলীয় প্রার্থী পক্ষে কাজ করে। এনিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। এর জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
নিহতদের নাম সোহাগ আলী (২৪)। তার বাড়ি যশোহরের মনিরাপুর এলাকায়। সোহাগ নজরুল ইসলামের ভাতিজা মনোয়ার হোসেন ও তার চাচাতো ভাই ইমরান হোসেনের সঙ্গে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে ঢাকায় চাকরি করতো। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সহকর্মীর বাড়িতে বেড়াতে আসে সোহাগ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সপ্তাহখানেক আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন নজরুল ইসলামের ভাতিজা মোনোয়ার হোসেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নজরুলের লিজ নেয়া পুকুর পাড়ে নিজের সরিষা ক্ষেতে যান তিনি। এ সময় আসাদুল ইসলামের লোকজন মনোয়ারকে বলে তোদের পুকুরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জানিস না। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা মনোয়ারকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়। এ সময় আসাদুলের পক্ষের মুসলেম নামের একজনের নাক ফেটে যায়। পরে মনোয়ারকে উদ্ধার করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা চলছিলো।
এদিকে, মনোয়ারের উপর হামলা ও আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে দেখতে ঢাকা থেকে আসেন তার চাচাতো ভাই ইমরান, তাদের সহকর্মী সোহাগ ও রনি। তারা প্রথমে সন্ধ্যায় আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মনোয়ারকে দেখে। এর পর তারা রাত ৯টার দিকে আত্রাই থেকে একটি সিএনজি নিয়ে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে যায়। তারা এলাকায় গেলে গ্রামে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রচার চালায় আসাদুল ইসলামের লোকজন। এ সময় তারা বাগমারা থানাসহ ভাগনদী ও ঝিকরা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয়।
তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই আসাদুলের লোকজন ডাঙ্গাপাড়া মোড়ে তাদের উপর হামলা করে। এ সময় তারা সিএনজি চালকসহ তিনজনকে ঘরে রাখে। তবে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সোহাগকে মাঠের মধ্যে ধরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে নিজের হেফাজতে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আসাদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, নজরুল ইসলাম বলেন, ভোটের দিন বিকেলে আমার ছোট ভাই সুজনকে মারপিট করে আসাদুল ইসলামের লোকজন। আমি ইজারা নিয়ে দুইটি খাস পুকুরে মাছ চাষ করি। ভোটের পরের দিন আসাদুল নিজে আমাকে ওই দুই পুকুরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছে এবং মাছ মেরে বিক্রি করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি আমার আরেকভাই নুরুল ইসলামের সেচ মেশিন বন্ধ করে দেয়। এ সব আসাদুল বলেন এই বিলে তোরা আর নামতে পারবি না। এ নিয়ে ওই দিন থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়াও শুক্রবার রাতেও ঘটনার আগে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু সময় মত পুলিশ আসেনি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার ফোন ধরেননি। কয়েকবার ফোন কেটে দেন।
তবে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে সেখানে পুলিশ যায় এবং স্থানীয় লোকজনের রোষানলে থেকে এক সিএনজি চালকসহ তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। তবে এর আগেই মাঠের মধ্যে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। নিহত সোহাগসহ তারা রাতে কেন গ্রামে আসলো এবং সেখানে কি ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।