এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ
ফেনীতে পেট্রোলের আগুনে দুই শিশু সন্তান’কে পুড়িয়ে হত্যা মামলা দায়েরের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঘাতক ২ আসামীকে গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করেছে র্যাব- ৭ চট্টগ্রাম। শিশু হত্যাকারী গ্রেফতারকৃত ২ আসামী হচ্ছে, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম মধুগ্রামের আবু আহামদের পূত্র আব্দুল আজিম (৪৫) ও ফেনী সদরের মধ্যম বিরিঞ্চির জয়নালের স্ত্রী মায়া বেগম (৪০)।
৬ অক্টোবর’২৩ ইং শুক্রবার র্যাব-৭ চট্টগ্রামের আভিযানিক একটি দল নির্ভরযোগ্য সোর্সের তথ্যের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে পেট্রোলের আগুনে পুড়িয়ে মর্মান্তিকভাবে ২ শিশুকে হত্যার অন্যতম এই দুই আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নিহত ভিকটিম শিশুদ্বয়ের পিতা শহিদুল ইসলাম এর সাথে আসামিদের দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পত্তিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। উক্ত বিরোধের জেরে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকার সময় শহিদুল ইসলাম এর বসত বাড়ির সামনে তার মালিকানা ও দখলীয় কবরস্থানে আসামী আনোয়ারারের চাচাতো ভাইকে দাফন করাকে কেন্দ্র করে শহিদুল ইসলাম এর সাথে আসামিদের বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আসামিগণ দেশীয় অস্ত্র, দা, খনতা, কিরিচ, নিয়ে শহিদুল ইসলামকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করলে শহিদুল ইসলাম তখন প্রাণ ভয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আসামিগণ শহিদুলকে হত্যা করতে না পেরে অতি মাত্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে শহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতঃ ভবিষ্যতে সময় সুযোগে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় শহিদুল এর বসত ঘরে পেট্রোল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরিবারের সকলকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে গত ০৩ অক্টোবর’২৩ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ২২.০০ ঘটিকায় প্রতিদিনের ন্যায় কাজ শেষে শহিদুল তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাত আনুমানিক ০২.০০ ঘটিকায় (তারিখ ০৪ অক্টোবর ২০২৩ইং তারিখে) আসামিগণ পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পরস্পর যোগসাজসে শহিদুল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার বসত ঘরের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘরে দরজা বাহির থেকে রশি দ্বারা বেঁধে রাখে। আগুনের মধ্যে শহিদুল ও তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হতে গিয়ে দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়, অপরদিকে পাশের কক্ষে ঘুমন্ত মাহিদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) এবং তানজিদুল ইসলাম গোলাপ (০৬) মূহুর্তের মধ্যে পেট্রোলের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তাদের উদ্ধারের জন্য শহিদুল ও তার স্ত্রী’র আত্মচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে আহত অবস্থায় শহিদুল ও তার স্ত্রী’কে উদ্ধার করে। অপর কক্ষে বড় পুত্র মাহিদুল ইসলাম শাহাদাত (১৩) ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ছোট ছেলে তানজিদুল ইসলাম গোলাপ (০৬)’কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করে। উক্ত চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি সারাদেশে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ফেনীসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনায় নিহত শিশুদ্বয়ের পিতা শাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩ জন নামীয় এবং ০৪/০৫ জন’কে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১৫, তারিখ-০৫ অক্টোবর ২০২৩ ইং, ধারা- ৪৩৬/৩০২/৩২৪/ ৩০৭/৪২৭/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
উক্ত অমানবিক চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার ০১ নং এজাহারনামীয় ও প্রধান পলাতক আসামী আব্দুল আজিম (৪৫) ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানাধীন পূর্ব মধুগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার দেয়া তথ্য মতে উক্ত মামলার এজাহারনামীয় আরেক আসামী মায়া বেগম (৪০)কে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন মধ্যম বিরিঞ্চি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বর্ণিত মামলার পলাতক আসামী এবং অন্যান্য সহযোগী আসামীদের সহায়তায় পরস্পর যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এবং পূর্ববিরোধের জেরে শহিদুলের ঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দিয়ে দুই শিশু সন্তান’কে পুড়িয়ে মারার কথা অকপটে স্বীকার করে এবং মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে ছিল।
উল্লেখ্যঃ অমানবিক ও মর্মান্তিক চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হওয়ার মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মামলার প্রধান ও ১নং আসামিসহ ০২ জনকে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এবং পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।